ঈদুল আযহা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কুরবানি দেয়ার পবিত্র উৎসব। এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কুরবানির ঈদ হাজির হয়েছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিন হাজার ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিন্মআয়ের মানুষ। এছাড়া সকল পর্যায়ে আর্থিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এমতাবস্থায় আমরা সচেতন ও উদ্যোগী হলে কুরবানি ঈদে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ। এদেশে পশুপালনের সাথে যুক্ত আছে হাজার হাজার পরিবার। গরিবের ঘরে কুরবানির গোশত পৌঁছালে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর প্রোটিনের চাহিদা মিটবে। এছাড়া চামড়ার ন্যায্যমূল্য পেলে নিন্মআয়ের মানুষেরা দারুণভাবে উপকৃত হবে। ইসলামের প্রত্যেকটা বিধানই বাস্তবসম্মত। যাকাত, উশর, ফেতরা, কুরবানি, দান করা ইত্যাদি ইবাদতের মধ্যে আমাদের জন্য অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা রয়েছে।
ঈদুল আযহায় পশু কুরবানি এদেশের ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতি ও ইবাদতের অংশ। আসুন কুরবানি সম্পর্কে পবিত্র আল-কুরআন থেকে কিছু বিষয় জেনে নিই।
সৃষ্টির শুরু থেকেই পশু কুরবানি ছিল
আর তাদেরকে আদমের দু’ছেলের সঠিক কাহিনীও শুনিয়ে দাও। তারা দু’জন কুরবানি করলে তাদের একজনের কুরবানি কবুল করা হলো, অন্য জনেরটা কবুল করা হলো না। সে বলল, আমি তোমাকে মেরে ফেলব। সে জবাব দিল, আল্লাহ তো মুত্তাকিদের নজরানা কবুল করে থাকেন। (সূরা মায়েদাহ-২৭)
প্রত্যেক নবীর উম্মতের ওপর পশু কুরবানি জারি ছিল
প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানির একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে লোকেরা সে পশুদের ওপর আল্লাহর নাম নেয় যেগুলো তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। (এ বিভিন্ন নিয়মের উদ্দেশ্য একই) কাজেই তোমাদের ইলাহও সে একজনই এবং তোমরা তাঁরই ফরমানের অনুগত হয়ে যাও। (সূরা হাজ -৩৪)
কুরবানির সাথে মিশে আছে ইবরাহীম আ. ও তার ছেলের আত্মত্যাগ
শেষ পর্যন্ত যখন এরা দু’জন আনুগত্যের শির নত করে দিল এবং ইবরাহীম পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিল এবং আমি আওয়াজ দিলাম, ‘হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্নকে সত্য করে দেখিয়ে দিয়েছ। আমি সৎকর্মকারীদের এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি স্পষ্ট পরীক্ষা।’ একটি বড় কুরবানির বিনিময়ে আমি এ শিশুটিকে ছাড়িয়ে নিলাম এবং পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে চিরকালের জন্য তার প্রশংসা রেখে দিলাম। (সূরা সাফফাত – ১০৩-১০৮)
কুরবানির উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন
তাদের গোশতও আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, তাদের রক্তও না। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে যায় তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হাজ – ৩৭)
নিজেকে জাহির করতে নয় বরং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য কুরবানি
এ পশুগুলোকে আমি এভাবেই তোমাদের জন্য বশীভূত করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকশ করো। (সূরা হাজ -৩৬)
কুরবানির গোশত অভাবীদের জন্যেও
আর যখন (কুরবানির পরে) তাদের পিঠ মাটির সাথে লেগে যায় তখন তা থেকে নিজেরাও খাও এবং তাদেরকেও খাওয়াও যারা পরিতুষ্ট হয়ে বসে আছে এবং তাদেরকেও যারা নিজেদের অভাব পেশ করে। (সূরা হাজ্ব – ৩৬)
কুরবানির গোশতের সাথে অভাবীদের ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছাতে হবে
কিন্তু সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করার সাহস করেনি। তুমি কি জানো সেই দুর্গম গিরিপথটি কী? কোনো গলাকে দাসত্বমুক্ত করা অথবা অনাহারের দিন কোন নিকটবর্তী এতিম বা ধুলিমলিন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। তারপর তাদের মধ্যে শামিল হওয়া যারা ঈমান এনেছে এবং যারা পরস্পরকে সবর ও (আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি) রহম করার উপদেশ দেয়। এরাই ডানপন্থী। (সূরা বালাদ – ১১-১৮)
আসুন নিজে কুরবানি দেই এবং অপরকে উদ্বুদ্ধ করি। কুরবানির গোশত ও চামড়া থেকে গরিব মানুষদের অধিকার বুঝিয়ে দেই। পাশাপাশি অভাবী মানুষকে খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট উপহার দেই। গরিব অসহায়দের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করি। নিষ্ঠার সাথে কুরবানি দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যাই।
দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিতঃ লিঙ্ক