বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশের চৌকস ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জাতি স্বত্বাকে মারাত্মক হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশ, জাতি ও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের অবতারণা করা হয়েছিল। তিনি পিলখানায় নিহতদের শাহাদাত কবুলিয়াত, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যধারণ এবং দেশ-জাতির কল্যাণ কামনায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন।

তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত পিলখানা শহীদদের স্মরণে ‘আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল’ এ সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসাইন, মহানগরী শুরা সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, এ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান আজমী, ফজলে আহমেদ ফজলু ও কুতুব উদ্দীন প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলত পিলখানা ট্রাজেডির মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল ও রাষ্ট্রীয় সীমান্তকে অরক্ষিত করা হয়েছে। সরকার গণমানুষের কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত রয়েছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে নিজেরাই জননিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই দেশ এখন দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি দুর্নীতিবাজরা দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে ব্যাপক বিত্তবৈভব সৃষ্টি করেছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিরোধী দলের ওপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন আদর্শকে নির্মূল করা যায়নি; আর কখনো যাবেও না। তিনি সরকারকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে গণতান্ত্রিক ও ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতা অনৈতিকভাবে দীর্ঘায়িত করার জন্যই দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করতেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। তারা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতেই আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপির জন্য কথিত সার্চ কমিটির নামে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু সচেতন জনতা তাদের স্বপ্নবিলাস কখনোই বাস্তবায়িত হতে দেবে না বরং নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় করেই ছাড়বে। তিনি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, পিলখানা ট্রাজেডি সভ্যতার ইতিহাসে নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। মূলত, ঘটনা চলমান অবস্থায় তড়িঘড়ি করে হত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের হত্যা ও নির্মম নির্যাতনের আরও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। রাজধানীর উপকন্ঠে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যা ও নিধনযজ্ঞ চালালেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টগুলো আজও আলোর মুখ দেখেনি। তিনি ঘটনার নেপথ্যের মূল নায়কদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় ব্যর্থতার জন্য সরকারকে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।