পবিত্র আল কুরআন সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য “চূড়ান্ত বার্তা”। মানবজাতির মুক্তি, কল্যাণ, শান্তি ও সুপথ প্রাপ্তির জন্য সর্বশেষ পথ নির্দেশিত চিরন্তন হেদায়াতের একমাত্র মহাগ্রন্থ। এর ভাষা ও বক্তব্য শাশ্বত ও চিরঞ্জীব। বিশ্ববাসীর কাছে আল কুরআন এক জীবন্ত মুজেজা। মানব সমাজের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা শুধুমাত্র আল কুরআনে উল্লেখিত আদদ্বীন অর্থাৎ ‘ইসলাম’ অনুসরণ অনুকরণ কিংবা প্রত্যাখানের মধ্যেই নিহিত। এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য পবিত্র আল কুরআনকে সহজ ভাষায় নাযিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ
“আর আমরা নিশ্চয় আল কুরআনকে সহজ করেছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, আছে কি কোনো উপদেশ গ্রহণকারী ?” (সূরা আল কামার : ১৭)
পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ার পর থেকে এই মহাগ্রন্থের একটি হরফও পরিবর্তন কেয়ামত পর্যন্ত হবে না। এর অনুরূপ একটি বাক্য রচনার ক্ষমতা কারো নেই এবং হবে না। নির্ভুল হেদায়াতের এই মহাগ্রন্থ হেফাজতের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চিতরূপেই আমিই স্মারকটি (কুরআন) প্রকাশ করেছি। আমরা এর সংরক্ষক।” (সূরা আল হিজর : ৯)
“নিশ্চয়ই এটি একটি সম্মানিত কুরআন। এটি রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে (উম্মুল কিতাবে)।” (সূরা আল ওয়াকে’আ : ৭৭, ৭৮)
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। প্রকৃত শুদ্ধ ও নির্ভুল কথাকে ভুল চিন্তাধারা হতে ছাঁটাই করে পৃথক করে রাখা হয়েছে।” (সূরা আল বাকারা : ২৫৬)
এ পবিত্র কিতাবের সূচনা হয়েছে একটি সুস্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে, আর তা হলো : “এটি সে কিতাব যার মধ্যে কোনো সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। মুত্তাকীদের জন্য এটা হিদায়াত।” (সূরা আল বাকারা : ০২)
অর্থাৎ এ কিতাব থেকে হিদায়াত পেতে হলে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হবে। তাদের মধ্যে মন্দ থেকে বেঁচে থাকা ও ভালকে গ্রহণ করার প্রবল আগ্রহ থাকতে হবে। কুরআন মজীদ থেকে হেদায়াত লাভের জন্য এটা প্রধান ও পূর্বশর্ত।
ইসলামের পরিচয়
সিলমুন, সালমুন বা আরবী ‘সলম’ মূল ধাতু থেকে ইসলাম শব্দের উৎপত্তি। এর শাব্দিক অর্থ শান্ত হওয়া, বিশ্রামে থাকা, কর্তব্য নিস্পন্ন করা, পাওনা বা অধিকার দিয়ে দেয়া, পূর্ণ শান্তিতে থাকা, আনুগত্য করা, ‘কোন কিছু মাথা পেতে মেনে নেয়া’ ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ- একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত জীবন-পদ্ধতি অনুসরণ করা এবং এর বিপরীত সব স্বার্থবাদী, অলিক চিন্তা, মত-পথ ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে চলা। আল গাজ্জালী (রহ.) এর অর্থ লিখেছেন, আনুগত্য স্বীকার করা এবং বাধ্যতা, অস্বীকৃতি হঠকারিতা বর্জন করা।
ইসলাম হলো পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা (ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব)। সেটা হলো সকল দ্বীনের সমন্বিত রূপ এবং সকল দ্বীনের সারাংশ। ইসলাম নিছক ইবাদতের জন্য নয়। ব্যক্তি, পরিবার, রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আইন, বিচারব্যবস্থা, সমাজ জীবন ইত্যাদি সবই ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের বক্তব্য রয়েছে। আদর্শ ও জীবন বিধান হিসেবে ইসলাম ন্যায়সঙ্গত ও বাস্তবানুগ ও উন্নত যে দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে অন্য কোনো আদর্শের অবস্থান তার ধারে কাছেও নেই। মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়টিও ইসলামে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে।
ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত একমাত্র নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। দ্বীন-ধর্ম-জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামই মানবতার মুক্তির একমাত্র চূড়ান্ত সনদ যা হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত ও প্রগতিশীল। পৃথিবীতে অন্য কোন মতবাদে নির্ভুল আদর্শ এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত বিধান নেই। অতএব, জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামই একমাত্র চূড়ান্ত ব্যবস্থা।
মানুষ নিজেকে বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন জীব বলে দাবি করে থাকে। অথচ সময়ে সময়ে সেই মানুষই এতটা যুক্তিহীন হয়ে পড়ে যে, যা কিছু সম্মানজনক, ন্যায়ানুগ সুন্দর এবং স্বাধীন তা বাদ দিয়ে স্স্পুষ্টরূপে দৃশ্যমান কুৎসিত, মিথ্যা, অপরাধমূলক এবং শয়তানি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। এর কারণ এই নয় যে, মানুষের মধ্যে ভাল এবং খারাপ, সুন্দর ও অসুন্দরের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের ব্যাপারে উপযুক্ত গুণাবলি এবং জ্ঞানের অভাব রয়েছে। বরং এর কারণ এই যে, মানুষ সত্য অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণে শ্রম প্রদানে অনিচ্ছুক। আবার যখন মানুষ সত্যের দর্শন লাভ করে, তখনো সে সেটি রক্ষার উদ্দেশ্যে তার কর্তব্য পালন করে না। বরং মানুষ তার এই আবিষ্কৃত সত্য থেকে পলায়নের চেষ্টা করে। আর সে তখন এই মর্মে অজুহাত প্রদর্শন করতে থাকে যে, আবিষ্কৃত সত্যকে গ্রহণ করলে সে পরিবার, সম্প্রদায় ও দেশবাসীর বিরাগভাজন হয়ে পড়বে।
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে পিডিএফ ডাউনলোড করুনঃ আল-কুরআনের আলোকে ইসলামী আন্দোলনের সফলতা