ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর বন্ড ছেড়ে তহবিল সংগ্রহ করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি আমার নজরে এসেছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বিষয়টা বেশ ভাবনার উদ্রেক করে।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই টাকা বন্ড ছেড়ে জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে গুলশান-২ ও কাওরানবাজারে অত্যাধুনিক দুটি মার্কেট করা হবে। এছাড়া হাতিরঝিলের আলোকে কল্যাণপুর খালকে দৃষ্টিনন্দন করা হবে। (তথ্য সূত্র: যুগান্তর ২৮ মার্চ ২০২২)
এমন উন্নয়ন প্রকল্প নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। নগর বন্ড বাংলাদেশে প্রথম হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বন্ড ছেড়ে উন্নয়ন কাজের নজির আছে। আমরা দেশ গড়ার রাজনীতি করি। ভালো কোনো পরিকল্পনা দেখলে আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করি সেটা যেনো যথাযথ বাস্তবায়ন হয়।
কিন্তু একই সাথে আমরা শঙ্কিত। বর্তমানে উন্নয়নের আড়ালে লুটপাটের একটা ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে হাজির হয়। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনায় জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এছাড়া অযাচিত মূল্য দেখিয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ করা খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় এ সংক্রান্ত অজস্র খবর আমাদের আশাহত করে। আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে দুর্নীতির ফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি আমাদের দেশে কখনই কাম্য নয়। দুর্নীতির ভয়াবহতায় আমরা মনে হয় সেদিকেই আগাচ্ছি।
এহেন দুর্নীতি ও অনৈতিক ঘটনাবলীর সময়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণে আমরা একেবারেই উৎসাহ পাচ্ছি না। তদুপরি জনগণের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ আরো দুঃশ্চিন্তার বিষয়। আমরা চাই না কারো দুর্নীতির সুযোগে জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হোক।
সিটি করপোরেশন বন্ডের মাধ্যমে টাকা না উঠিয়ে ভবন নির্মাণের জন্য ডেভেলপার কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করতে পারে। এছাড়া মার্কেটের দোকানগুলো অগ্রীম বিক্রির ব্যবস্থা করে টাকা সংগ্রহ করতে পারে। তবে যা কিছুই হোক সচ্ছ্বতা ও জবাবদিহিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বস্তুত সিটি করপোরেশন নিয়মিত নাগরিক অধিকার দিতেই ব্যর্থ হচ্ছে। এ জাতীয় মেগা প্রকল্পে জড়িয়ে পড়লে সেটা আরো নাজুক অবস্থার দিকে যাবে বলে আমাদের ভয় হয়। আমরা আশা করবো সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবায় আরো মনোনিবেশ করবে।
প্রসঙ্গত বলতে চাই বন্ড ব্যবস্থা একটি সুদি ব্যবস্থা। যদিও বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থা সুদি পদ্ধতিতে পরিচালিত। তবে বেসরকারি পর্যায়ে ইসলামী ব্যাংকিং-সহ অন্যান্য অর্থনীতিক ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। সমাজে দুটো পদ্ধতি একসাথে প্রচলিত থাকায় সুদ ও ইসলামী অর্থনীতির ব্যবহারিক পার্থক্য সম্পর্কে আমরা সম্যক অবগত।
এমতাবস্থায় আমরা উপলব্ধি করি সুদমুক্ত ইসলামী অর্থব্যবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর। আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে বিনিয়োগ গ্রহণকারী ও বিনিয়োগ দাতা উভয়েরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
আমরা এমনই এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে সকল পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। লুটপাটমুক্ত বাংলাদেশ হবে। জনগণ আশা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কাজে সহযোগিতা করবে এবং নাগরিক অধিকার ভোগ করবে ইনশাআল্লাহ।