বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। জাতির আশা ছিল যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। মানুষ নিজের ভাষা প্রকাশ করতে পারবে, স্বাধীনভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে, একটি সুন্দর পরিবেশে সন্তান লালন-পালন করতে পারবে, সন্তানকে মানুষ করতে পারবে। দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল- এর যে শাসনামল সেটি মোটেও কোন সুশাসন ছিল না। ’৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছিল। এই সময়ে দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে দেশ যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশপ্রেমিক এবং ইসলামপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নারায়ে তাকবির শ্লোগানের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল। নারায়ে তাকবির স্লোগান- এর মাধ্যমে সেদিন জাতি প্রকৃত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব উপভোগ করতে পেরেছিল।”
তিনি আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর জনাব আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি জনাব মাহফুজুর রহমান, মহানগরীর মজলিসে শুরা সদস্য ও মিরপুর দক্ষিণ থানা আমীর জনাব আব্দুল হামিদ এবং মহানগরীর মজলিসে শূরা সদস্য ও মিরপুর পশ্চিম থানা আমীর জনাব আব্দুল মান্নান প্রমূখ।
মহানগরী আমীর আরো বলেন,“১৯৭২ থেকে ‘৭৫-এ যারা দেশ শাসন করেছিল, মানুষ খুন করেছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করেছিল, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে কুরআনের আয়াত উঠিয়ে দিয়েছিল, যারা কবি নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইসলাম শব্দটি তুলে দিয়েছিল, যারা দেশে দুর্ভিক্ষ এনেছিল, তারাই আজ আবার দেশে দুর্ভিক্ষের আগাম বার্তা দিচ্ছে। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। বাসন্তীরা লজ্জা নিবারণের জন্য জালের আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিন তারা ব্যাংক লুটপাট করেছিল, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছিল। সেই দলের নেতা যিনি একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান ছিল তিনি বলেছিলেন মানুষ পায় স্বর্ণের খনি আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার ডানে চোর, বামে চোর, সামনে চোর, পেছনে চোর। সেই দলের নেতা বলেছিল আমি বিদেশ থেকে সাত কোটি মানুষের জন্য কম্বল ভিক্ষা করে আনলাম আর এরা আমার কম্বলটা চুরি করে নিয়ে গেল। সেই দলই আজ দেশ শাসন করছে। তারাই আজ ব্যাংক লুটপাট করছে,” যোগ করেন তিনি।
মহানগরী আমীর বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে যায় এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা এমন কোন ঘটনা অন্য কোন দেশে ঘটেছে কিনা এটা আমার জানা নেই। সরকার এবং সরকারের প্রভাবশালী লোকজন এবং সরকার দলের আত্মীয়-স্বজন এই ব্যাংক লুটপাটের সাথে জড়িত তা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। দেশ এখন ডলার সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সহ নানান সমস্যায় ভুগছে। বিদেশ থেকে সরকার কম দামে তেল আমদানি করে দেশে বেশি দামে বিক্রি করে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে সেই টাকা সরকার লুটপাট করেছে কিন্তু জনকল্যাণে একটি টাকাও ব্যয় করেনি। দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কোন গবেষণা কার্যক্রম চালু করেনি।”
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের অফিস বন্ধ করে রেখেছে। জামায়াত আইন এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন একটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতের আগে আর কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামের নেতারা অন্যায়ের সাথে কখনো আপস করেননি। তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন তবুও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি।”
তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস থেকে শুরু করে সকল অফিস খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। নতুবা জনগণ তাদের অফিস তারাই খুলে নিবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সকলকে একসাথে লড়াই করার আহ্বান জানান।
তিনি স্বৈরশাসন, ফ্যাসিবাদ, জুলুমতন্ত্র থেকে দেশ এবং দেশের জনগণকে মুক্ত করার জন্য দল, মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান।
“আজকের দিন হল অঙ্গীকার গ্রহণের দিন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা এবং ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য আমাদেরকে অঙ্গীকার করতে হবে। পৃথিবীর কোন স্বৈরাচার সাধারণভাবে বিদায় নেয় না। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলে স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করতে হয়। জামায়াত বিগত ১৪ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই ফ্যাসিবাদের জুলুমের শিকার হয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা শাহাদাত বরণ করেছেন। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে ,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম এই শীর্ষ নেতা সরকারের কেনা ইভিএম মেশিন- এরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ”আগে রাতে ভোট চুরি করেছেন এখন দিনে চুরি করতে চান। জনগণ এইসব ইভিএম মেশিন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। দেশবাসীকে এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই প্রত্যেকটি হত্যার বিচার এই বাংলার জমিনে হবে ইনশাআল্লাহ। ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে যেভাবে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং তার উপর নিত্য করা হয়েছে এর বিচার এই বাংলার জমিনে হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, ”আপনারা যে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল গঠন করেছেন এগুলো বহাল রাখবেন। এগুলোতে আপনাদের বিচার হবে। এই বাংলার মাটিতে এই ফ্যাসিবাদের বিচার এই আদালতের মাধ্যমে হবে ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরো বলেন, “ প্রতিটি খুন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করা হবে। এ সময় তিনি ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক গুম করে রাখা আব্দুল্লাহিল আমান আজমিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জোর দাবি জানান। তিনি ব্যারিস্টার আরমানসহ আরো যাদেরকে গুম করে রাখা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়ারও জোর দাবি জানান । তিনি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মিয়া গোলাম পরওয়ার, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ,ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।