মহান আল্লাহর প্রতি যথাযথ ঈমান, আমলে সালেহ ও আর্ত-মানবতার কল্যাণ সাধনের চেষ্টার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জনের জন্য ইসলামী আন্দোলনের সর্বস্তরের জনশক্তিকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি আজ শুক্রবার সকাল ১০.৩০টায় রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ২ দিনব্যাপী ভার্চুয়াল রুকন শিক্ষা শিবিরের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা রাখেন, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্রগ্রাম মহানগরী আমীর মাওনানা মুহাম্মদ শাহজাহান। অনুষ্ঠানে দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক প্রমূখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, মোয়ামেলাত তথা আচার-আচরণ ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। পবিত্র কালামে হাকীমে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদেরকে এ থেকে আলাদা করা হয়েছে। মূলত, ইসলাম তথা দ্বীনে হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের মোয়ামেলাত তথা আচার-আচরণ সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে; চরিত্র মাধূর্যকে করতে হবে আল্লাহর রঙে রঙীন। আর এ পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না; এখনো নয় বরং বাধা-প্রতিবন্ধকতাই নিত্যসঙ্গী। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের বিপদ-আপদ আসলে তা সবর ও সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। তাহলেই দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, মু’মিনের পক্ষে কোন অবস্থায় হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। যেকোন অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশে মু’মিনকে খুশী থাকতে হবে এবং ধৈর্য, সাহসিকতা, প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার সাথে ময়দানে অকূতভয় সৈনিক ও অতন্ত্র প্রহরীর মত কাজ করে যেতে হবে। আল্লাহ এক্ষেত্রে আমাদের জন্য বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি অধঃস্তনদের সাথে আচার-আচরণ প্রসঙ্গে বলেন, ঊর্ধ্বতনের উচিত অধঃস্তনদের আগে সালাম দেয়ার অভ্যাস করা। এতে ব্যক্তির অহঙ্কার দূরিভূত হয় এবং জান্নাতের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তিনি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিনয়ী ও নম্র হওয়ার আহবান জানান।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উৎখাত করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সমাজের সকল স্তর ও পর্যায় থেকে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চায় নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি জাতিকে নাস্তিক্যবাদী ও দ্বীনবিমূখ করার জন্য পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনবাদ ও ইসলাম বিরোধী অধ্যায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাই এই দেশ, জাতি ও ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চেষ্টা চালাতে হবে। মূলত, দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য দ্বীন বিজয়ী করার কোন কোন বিকল্প নেই। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষে সকলকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও সর্বোচ্চ কোরবানী পেশের আহবান জানান।
এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, গোটা বিশ্বে এক ক্রান্তিকাল চলছে। ক্ষুধা-দারিদ্র, বেকারত্ব, নিরাপত্তাহীনতা, অশান্তি ও নানাবিধ সঙ্কট বিশ্বকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আমাদের দেশের অবস্থা আরো করুণ। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। অপশাসন-দুঃশাসন, লাগামহীন লুটপাট ও দুর্নীতি জাতিস্বত্তাকেই হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে। জনগণ নিজেদের অধিকার ভোগ করতে পারছে না। আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ইসলামী আন্দোলন আমাদেরকে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের রাস্তায় ফিরে এনেছে। জাতিকে নেতৃত্ব শূণ্যতার হাত থেকেও রক্ষা করেছে। আমরা এই কাফেলার সন্ধান না পেলে জাহেলিয়াতের অন্ধকার গহব্বরে নিমজ্জিত হতাম। জামায়াতে ইসলামী আমাদেরকে কুরআনের পথে আহবান করে জীবনকে আলোকিত করেছে। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদেরকে কুরআনের রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করতে হবে।
এ্যাডভোটেক মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, দাওয়াত ইলাল্লাহ হচ্ছে মু’মিন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় অনুসঙ্গ। সকল নবী-রাসুল (সা.) মিশনই ছিল এটি। আর এ দাওয়াত দিতে হবে উত্তম কথা, হেকমত ও প্রজ্ঞার সাথে। যা মানুষের মনোজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হয়। তিনি দ্বীনকে বিজয়ী করতে প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। আমরা বিক্রয় করেছি; আল্লাহ তা’য়ালা কিনে নিয়েছেন। তাই মু’মিন জীবনের প্রতিটি পদে পদে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা আসবে। আর সেসব পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য রুকনদেরকে শপথের আলোকে ময়দানের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।