গণবিচ্ছিন্ন ও নৈশ্যভোটের সরকার পতন নিশ্চিত জেনেই জামায়াতসহ বিরোধী দলকে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে বাধা দিয়ে জনতার সাথে স্বৈরাচারি ও অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং আদর্শিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি আজ দুপুর ১.৩০টায় রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জাতীয় পাঠ্যসূচি থেকে নাস্তিক্যবাদী, কুফরী ও ইসলামী বিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য হ্রাস ও নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন। শাহাজাদপুরে সমাবেশ শেষ করে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে গুলশান লিংক রোডে এসে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডাঃ ফখরুদ্দীন মানিক এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জিয়াউল হাসান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, জামাল উদ্দিন, মু. আতাউর রহমান সরকার ও নাসির উদ্দীন প্রমূখ। উল্লেখ্য, বিক্ষোভ মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ার পর পুলিশ পথচারিদের ওপর হামলা চালায় ও বেধরক মারধর শুরু করে এবং কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বোধ-বিশ্বাস, ঈমান-আকিদাহ অনুযায়ি মানুষ ‘বনি আদম’ হলেও সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে চিহ্নিত কিছু ‘বনি বানর’ প্রজাতির উটকো উপদ্রব শুরু হয়েছে। তারা নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক্যবাদী, কুফরী ও বিজাতীয় দর্শন শিক্ষা দেয়ার জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই দেশের জাতীয় পাঠ্যসূচিতে অবৈজ্ঞানিক, অপ্রমাণিত ও কল্পনাপ্রসূত ডারউইনি বিবর্তনবাদ ও নাস্তিক্যবাদী দর্শন, ইসলামী তাহজিব-তামুদ্দন ও সংস্কৃতির প্রতি বিষোদগার, উপমহাদেশের মুসলিম শাসকদের চরিত্রহনন, সমকামীতাকে উৎসাহিত করণ এবং হিজাব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অযাচিত ও আপত্তিকর কথা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জনগণের তোপের মুখে ২টি বই প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হলেও অন্যগুলো রয়েছে বহাল তবিয়তে। কিন্তু এদেশের ইসলামপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ জনতা এই বিভীষণদের দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র কখনোই মেনে নেবে না। তিনি সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে অবিলম্বে পাঠ্যসূচি থেকে কুফরী ও বিতর্কিত অধ্যায় প্রত্যাহার, ইসলামিক স্কলারসহ সকল ধর্মীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন করে পাঠ্যসূচি প্রণয়নের আহবান জানান। অন্যথায় বাঁদর প্রজাতির বাঁদরামীকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরুণের কথা বলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে জনগণের পকেট কেটে দেশের অর্থনীতিকেই ফোকলা করে দিয়েছে। উৎপাদনে না যাওয়ার পরও কেন্দ্রগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দেয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে জাতীয় অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে এখন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে ইতোমধ্যেই বিশ^রেকর্ড করে ফেলেছে। সরকার গত ১৪ বছরে ১১ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি এখন চরমে উঠেছে।
শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সঙ্গত কারণেই কারখানা মালিকরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে হাজার হাজার শ্রমিককের কর্মচ্যুতি ঘটেছে; বেড়েছে বেকারত্ব। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই ফ্যাসীবাদী ও বিনাভোটের সরকারকে ক্ষমতা থেকে অবিলম্বে বিদায় করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করেছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের একের পর এক হত্যা করে দেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। তারা আসন্ন গণআন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্যই দেশের বরেণ্য ও পরিচ্ছন্ন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে অন্তরীণ রেখেছে। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী বাকশালীরা নিজেদের কিস্তিডুবি ঠেকাতে পারবে না। কারণ, ইতোমধ্যেই আওয়ামী তরীর তলা ফুটা হয়ে গেছে। তিনি সরকারকে উড়ণচণ্ডী রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার আগামী দিনে তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন করার জন্য দলদাস ও বশংবদ লোকদের দিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। মূলত, এই ‘আমড়া কাঠের ঢেঁকি’ আর ‘তালপাতার সেপাই’ মার্কা নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। কমিশন ইতোমধ্যেই প্রভূভক্তির অনন্য নজীর স্থাপন করেছে। জনগণ আগামী দিনে কোন দলীয় সরকার ও বর্তমান কমিশনের অধীনে নির্বাচনের ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই সফল হতে দেবে না। তিনি সরকারকে ইঁদুর-বিড়াল খেলা পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ গণদাবি রাজপথেই আদায় করবে ইনশাআল্লাহ।