বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘদিনেও সে লক্ষ্যে আমরা পৌঁছতে পারিনি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানের স্বপ্ন আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। তাই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আজ রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে শুরা সদস্য জসিম উদ্দিন, জামায়াত নেতা আনিসুর রহমান, নেয়ামুল করিম, আরিফুল আলম ও এমদাদুল হক যায়েদ প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের আমলেই ধ্বংস করা হয়েছে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সরকার জনগণের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস এবং নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সরকারের অপশাসন ও দুঃশাসনের কারণেই বহির্বিশ্বে আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে দেশ এখন কুটনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণীর মানুষই এখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বললেও উন্নয়ন হয়েছে ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের। সারা দেশেই চলছে দখলবাজী ও লুটপাটের মহোৎসব। দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলো এখন অরক্ষিত। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা চুরি হওয়ার মতো গর্হিত ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সরকার এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং অপরাধীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্মূলের নির্মম ও নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠেছে। দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সরকার আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে ও হত্যা করে অতীতে কোন আদর্শকে নির্মূল করা যায়নি আর কখনো যাবেও না। তিনি সরকারকে ষড়যন্ত্র ও বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে সুস্থ্যধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।