ইসলামী আন্দোলন শুরু হয় দাওয়াতি কাজ দিয়ে। আন্দোলন যে পর্যায়েই থাকুক দাওয়াতি কাজ অপরিহার্য। আল্লাহর রাসূল (সা) গোপন ও প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছেন। মক্কী জীবনের তেরো বছর ভীষণ প্রতিকুলতার মধ্যে, এমনকি মদিনায় যুদ্ধের অবসরে দাওয়াতি কাজ করেছেন। যুদ্ধ বন্ধ হলেই বিভিন্ন গোত্র এবং অঞ্চলে দাওয়াতি টিম প্রেরণ করেছেন। দাওয়াতি টিম সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও ভয় পেয়ে দাওয়াতী কাজ কখনো বন্ধ হয়নি।
প্রত্যেক নবী-রাসূল মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান করে নবুয়্যাতের দায়িত্ব শুরু করেছেন। তন্মধ্যে খুব কম সংখ্যক নবী-রাসূল দুনিয়াতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পেরেছেন। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আখেরাতের মুক্তি ছিল সফলতার মাপকাঠি। তবে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সফলতাকে ইসলাম উপেক্ষা করেনি। সেক্ষেত্রেও নিরবিচ্ছিন্ন দাওয়াতি কাজের বিকল্প নেই।
সূরা ইয়াসিনে বর্ণিত হয়েছে, এক জনপদে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে মহান আল্লাহ দু’জন নবী প্রেরণ করেন। তাদের সাহায্যের জন্য আরো একজন নবী পাঠান। তিন নবীর প্রচেষ্টায় মাত্র এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলেও জনপদের মানুষেরা তাকে হত্যা করে। আল্লাহ তায়ালা ওই জনপদ ধ্বংস করে দেন। এখানে শিক্ষণীয় যে, বিজয়ী হওয়া মূল সফলতা নয়। ইসলামের পথে নিজেকে নিয়োজিত রাখার মধ্যেই আখেরাতের চূড়ান্ত সফলতা নিহিত। স্মরণ করা যেতে পারে, নূহ (আ) একাধারে নয়শত বছরেরও বেশি সময় দাওয়াতি কাজ করেছেন।
ইসলামের সেনপতিরা কোথাও অভিযানের পূর্বে শত্রু পক্ষকে শুরুতেই দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। সন্ধি বা বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর দক্ষ প্রশাসক নিয়োগের পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণ করে দাওয়াতি কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন। সারাবিশ্বে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে সাহাবী, তাবেইনদের দাওয়াতি সফরে। বাংলাসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে প্রচারের জোরে। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে যে মুসলিম শাসনের সূচনা করেন, তারও বহুবছর পূর্বে এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছেন দায়ী ইলাল্লাহ ও মুসলিম বণিকেরা।
দাওয়াতি কাজ কষ্টিপাথরের মতো। দাওয়াতি কাজ না করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অন্য চেষ্টা মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দিন হে মুহাম্মদ (সা) এটাই একমাত্র পথ, যে পথে আমি আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই।’ (ইউসুফ : ১০৮)
দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে ইসলাম শুধু ছড়িয়ে পড়ে না, সেই সাথে মজবুত হয়। দাওয়াত প্রদানকারীর ব্যক্তিগত আমল ও আখলাক উন্নত হয়। নতুবা শয়তানের খপ্পরে পড়ে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে হয়।
স্বজন ও নিকট আত্মীয়দের আগে দাওয়াত দিতে হয়। যাদের সাথে হরহামেশা উঠাবসা হয়, তারা দাওয়াত পাওয়ার হকদার। কাছের ব্যক্তি ইসলামের দাওয়াত না পেলে মহান আল্লাহর কাছে কঠোর জবাবদিহি করতে হবে।
আমাদের দাওয়াত হতে হবে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উপায়ে, বলে ও লিখে প্রকাশ করে এবং ব্যক্তিগত ব্যবহার-লেনদেনের দ্বারা। বাস্তব সাক্ষ্য প্রদানে পিছিয়ে থাকলে মুখের কথায় ইসলামের প্রচার হয় না।
ইসলামের দাওয়াত মানুষ কবুল করবে কিনা সেটা একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমাদের কাজ শুধু চেষ্টা করে যাওয়া। তবু সংগঠন পরিচালনার শৃঙ্খলার স্বার্থে খেয়াল করতে হবে কতোজন ভাই আমদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কতোজন ভাইয়ের কাছে আমরা দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছি এবং কতোজন ভাই দাওয়াতি কাজে শরিক হলাম।
দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত হৃদয় নিয়ে সকলের কাছে যেতে হবে। যত নগন্যই মনে হোক, সবাইকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। তবে ইসলাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিকল্পিত কাজের তাগিদ দিয়েছে। টার্গেটকৃত ব্যক্তির বৈশিষ্টের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সকল অঙ্গনে কাজ হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখা দরকার। প্রত্যেক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্লাসে দাওয়াত পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। এগুলো পর্যালোচনায় আনতে হবে।
দাওয়াতি কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। কুরআনের ভাষ্য হচ্ছে, ‘যে রসূলই তাদের কাছে এসেছে তাকেই তারা বিদ্রুপ করেছে’। বিদ্রুপ ও ভয় প্রত্যেক দা’য়ি ইলাল্লাহকে মোকাবেলা করতেই হবে। ধৈর্য ধরে অটল ও অবিচল থেকে দাওয়াতি কাজ অব্যাহত রাখার মধ্যেই দুনিয়া ও আখেরাতে মুক্তি। মহান আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমিন।